স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যৌতুকের দাবীতে স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় ফ্রান্স প্রবাসী পারভেজের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। পারভেজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ভাদুঘর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে।
বিয়ের প্রায় আড়াই বছর পরও স্বামীর বাড়িতে গৃহবধূ তামান্ন খান মুন্নী স্বামীর বাড়িতে স্থান না পেয়ে গত ৩১ জানুয়ারি ২০২১ইং তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১’এ একটি অভিযোগ দাখিল করেন। সেই অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে পারভেজ আহাম্মদের বিরুদ্ধে গত ১৬ মার্চ ২০২১ইং তারিখ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। অবিলম্বে পারভেজকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দের নির্দেশ দেন বিজ্ঞ আদালত।
জানা গেছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ইং তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ভাদুঘর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে পারভেজ আহাম্মদের সাথে সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চান্দপুর গ্রামের জাকির হোসেন খানের মেয়ে তামান্না খান মুন্নী আক্তারের সাথে ১০ লাখ টাকা কাবিন ধার্য্যে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের সময় তামান্নার বাবা পারভেজ আহাম্মদকে মেয়ের জন্য নগদ টাকা, মূল্যবান আসবাবপত্র, স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার উপঢৌকন প্রদান করা হয়। বিয়ের পর কাবিন রেজিষ্ট্রি করার নিয়ম থাকলেও অজ্ঞাত কারণে অত্যন্ত সুকৌশলে এড়িয়ে যান পারভেজ। বিয়ের ১৩ দিন পর ফ্রান্সে ফিরে যান পারভেজ। পরে স্ত্রীকে ফ্রান্সে নিয়ে যেতে শ্বশুর বাড়ি থেকে ১০ লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে স্ত্রীকে চাপ দেয় পারভেজ। স্ত্রী তামান্না এতে রাজী না হওয়ায় পারভেজের ভাই, ভগ্নিপতি, মা’সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তামান্নার উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তামান্নার কোন খোঁজ না পেয়ে তামান্নার পিতা-মাতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় গত ৩ এপ্রিল ২০১৯ ইং তারিখে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। পরদিন পুলিশ তামান্নাকে উদ্ধার করে পিতা-মাতার হেফাজতে দেয়। পারভেজের পরিবারের সাথে বিষয়টি সমাধানের জন্য চেষ্টা করেও সফল হয়নি তামান্নার পরিবার।
অভিযোগ মিলেছে- ফ্রান্স থেকে পারভেজ গত ২৫.১২.২০ইং তারিখে দেশে আসেন। দেশে আসার মাত্র চারদিন পরই ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ইং তারিখে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই নিজ গ্রামেই গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন যৌতুক লোভী প্রতারক পারভেজ আহম্মেদ। এদিকে তামান্নার পরিবার বিষয়টি সমাধানের জন্য গত ২৩ জানুয়ারি ২০২১ ইং তারিখে সালিশ সভার আয়োজন করলেও প্রতারক পারভেজ সালিশ সভা স্থগিত করে পরেরদিন ২৪ জানুয়ারি ২০২১ ইং তারিখে পারভেজ ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা চান্দপুরে তামান্নার বাড়িতে গিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের কথা গোপন রেখেই প্রথম স্ত্রীর যৌতুকের টাকা দাবী করেন। এ সময় তামান্না প্রতিবাদ করলে পারভেজ ও তার পরিবারের অন্যান্য লোকজন তামান্নাকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। এরপর পরিবারের সহায়তায় তামান্না চিকিৎসা কার্যক্রম শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেল জজ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ)/৩০ ধারায় অভিযোগ দাখিল করেন। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কার্যালয়ের প্রোগ্রাম অফিসার শরিফা খাতুন তদন্ত শেষে আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্বাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এজাহারনামীয় ০১নং আসামী প্রতারক স্বামী পারভেজ আহাম্মদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করেন।
এ ব্যাপারে তামান্না খান মুন্নী আক্তারের পিতা জাকির হোসেন খান বলেন, পারভেজ একজন যৌতুক লোভী। যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে বিভিন্ন সময় মারধর ও নির্যাতন করেছে। আমরা তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। আদালত পারভেজের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। সে যৌতুকের টাকা না পাওয়ায় আবার অন্যত্র বিয়ে করেছে বলে জানতে পেরেছি। জাকির হোসেন খান আরো বলেন, পারভেজের পাসপোর্ট নম্বর-১৭২ও৩৬৩১৩। সে যে কোন সময় দেশ থেকে পালিয়ে যেতে পারে। আমি যৌতুকলোভী পারভেজকে দেশ থেকে পলানোর আগেই যেন গ্রেফতার করা হয় সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ করছি।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply